হবিগঞ্জ, ২০ জুলাই (ঢাকা পোস্ট) : হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা প্রকাশ না করায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন স্বপ্রণোদিত বাদি হয়ে মামলা দায়ের করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বেলা ১২টায় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বৃন্দাবন সরকারি কলেজে প্রহরী দ্বারা শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই আল্টিমেটাম দেন। নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও তার পরিবার সামাজিক হেনস্থার ভয়ে মামলায় যায়নি। কিন্তু জেলার এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থী হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে সর্বত্র চলছে সমালোচনা।
সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে নানা শ্রেণী-পেশার লোকজন উপস্থিত থেকে সংহতি জানান। সংগঠনটির আহ্বায়ক পীযুষ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও লেখক সিদ্দিকী হারুনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজনীতিক অ্যাড. জুনায়েদ আহমেদ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, খোয়াই থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন খা, নারী অধিকারকর্মী মাহমুদা খা, নাট্যশিল্পী অদ্বিতীয়া ধর প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। শুধু সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উল্টো ধর্ষণে অভিযুক্ত কলেজ প্রহরী রোমান মিয়া ও তার সহযোগীরা ফেসবুকে ভিডিও বক্তব্য প্রচার করে অভিযোগকারী সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য প্রচার করছে। যারা সরাসরি ধর্ষণে অভিযুক্তের পক্ষে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে তাদেরকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
অ্যাডভোকেট জুনায়েদ আহমেদ বলেন, আগে এই কলেজ ছিল মুক্ত স্বাধীন। এই শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছে। কিন্তু এখন কলেজকে একটি কারাগারের মতো করা হয়েছে। ছাত্রদের কোনো ক্ষমতা নেই কলেজটিতে। ছাত্র রাজনীতিও প্রায় শূন্যের কোঠায়। এজন্যই একজন প্রহরী দিনেদুপুরে একজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দুঃসাহস রাখে।
বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতি পীযুষ চক্রবর্তী তিনটি দাবি উত্থাপন করে বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। রোমান মিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই দুপুরে পরীক্ষার পর কলেজের একটি বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন অনার্স পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী। এ সময় কলেজের প্রহরী রোমান মিয়া এসে তাদের ওপর চড়াও হয়ে তাদেরকে পুলিশ ও কয়েকজন ছাত্রনেতার ভয় দেখান। চড়-থাপ্পড় মারেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় তাদেরকে গালিগালাজ করেন। এরপর ছাত্রকে ছাদে তালা মেরে রাখেন। আর ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে ওই জায়গা ত্যাগ করেন। এরপর ৩ তলার রুমে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) কলেজ প্রহরী রুমান মিয়াকে বহিষ্কার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ। আর ধর্ষণের অভিযোগের জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেওয়ান জামাল উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জমা দেয়। কিন্তু প্রতিবেদন এখনই প্রকাশ্যে আনা হবে না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan